Important Links

নবম ও দশম শ্রেণি_ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়_অধ্যায় পঞ্চম_ বাংলাদেশের নদ-নদী

 


বাংলাদেশের নদ-নদী ও প্রাকৃতিক সম্পদ


বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদীগুলোই যেন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অসঙখ্য নদ-নদী উত্তর হিমালয় এবং ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে এসেছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। অনেকগুলো নদী বেশ দীর্ঘ এবং প্রশস্ত । আবার বেশ কিছু নদী এবং সরু হয়ে গেছে। অনেক নদ-নদী আমাদের মানচিত্র থেকে অনেক বছর আগেই হারিয়ে গেছে এবং কিছু যাওয়ার পথে।

বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ৭০০ টি নদ-নদী রয়েছে। এগুলোর আয়তন  ২২,১৫৫ কি.মি.। এসব নদী আমাদের প্রধান সম্পদ। নদী ছাড়াও বাংলাদেশে ভূমি, বনভূমি, কৃষি জমি, খনিজ পদার্থসহ বেশকিছু প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদ আহরণ, ব্যবহার, বর্ধন ও সংরক্ষণের ওপর বাংলাদেশের জনগণের অস্তিত্ব অনেকাংশে নির্ভর করছে। 

বাংলাদেশের নদ-নদী

বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, পশুর, সঙ্গে প্রভৃতি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীর উৎপত্তিস্থল হিমালয়, তিব্বত, আসামের বরাক এবং লুসাই পাহাড়ে। এগুলো শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

ক. পদ্মা: পদ্মা নদী ভারত ও ভারতের উত্তরবঙ্গে গঙ্গা এবং বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত। এর উৎপত্তিস্থল মধ্য হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহে। উত্তর ভারতের কয়েকটি রাজ্য অতিক্রম করে গঙ্গা রাজশাহী জেলা দিয়ে পদ্না নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি গোয়ালন্দের নিকট ব্রহ্মপ্রত্রর প্রধান ধারা যমুনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চাঁদপুরে এসে এ নদী মেঘনার সঙ্গে মিলিত হয়ে বরিশাল ও নোয়াখালী অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। পদ্মার কয়েকটি শাখা নদী হলো --- ভাগীরথী, হুগলি, মাথাভঙ্গা, ইছামতী, ভৈরত, কুমার, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা, চিত্র, মধুমতী আড়িয়াল খাঁ ইত্যাদি।

খ. ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা: তিব্বতের মানস সরোবরে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে। আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায় এটি প্রবেশ করেছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারাটি এক সময়ে ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে দক্ষিণ-পূর্বিদিকে আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত হতো। কিন্তু ১৯৮৭ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পে ব্রক্ষপুত্রের তলদেশ উত্থিত হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং নতুন স্রোতধারার একটি শাখা নদীর সৃষ্টি হয়। এটি যমুনা নামে পরিচিত। এটি দক্ষিণে গোয়ালন্দ পর্যন্ত যমুনা নদী বলে পরিচিত। যমুনার শাখা নদী ধলেশ্বরী এবং ধলেশ্বরীর শাখা নদী- বুড়িগঙ্গা। ধরলা ও তিস্তা ব্রহ্মপুত্রের উপনদী। করতোয়া ও আত্রাই হলো যমুনার উপনদী। ব্রহ্মপুত্রের দৈর্ঘ্য ২৮৯৭ কি.মি.।

গ. মেঘনা: আসামের বরাক নদী নাগা-মণিপুর অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই মিলিত ধারা সুনামগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জের কাছে কালনী নামে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। মুন্সীগঞ্জের কাছে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার মিলিত জলধারাই মেঘনায় এসে যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে চাঁদপুরের কাছে পদ্নার সঙ্গে মিলিত হয়ে বিস্তৃত মোহনার সৃষ্টি করেছে। এটি পতিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বর্ষার সময় প্লাবন ও পলি মাটিতে মেঘনা বাংলাদেশের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

ঘ. কর্ণফুলী: বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী কর্ণফুলী। এর উৎপত্তিস্থল লুসাই পাহাড়ে। ৩২০ কি. মি. দৈর্ঘ্যর এ নদীটি চট্টগ্রাম শহরের খুব কাছ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদী হচ্ছে কাপ্তাই, হালদা, কাসালং ও রাঙাখিয়াং। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রে বন্দর চট্রগ্রাম কর্ণফুলীর তীর অবস্থিত। পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র  এবং চট্টগ্রাম কর্ণফুলীর তীরে অবস্থিত। পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এ নদীর গুরুত্ব অধিক।

ঙ. তিস্তা নদী: সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে উৎপত্তি হয়ে তিস্তা নদী ভারতের জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং – এর মধ্যে দিয়ে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদী ১৭৮৭ সালের প্রবল বন্যায় গতিপথ পরিবর্তন করে ব্রহ্মপুত্রের একটি পরিত্যক্ত গতিপথে প্রবাহিত হতে থাকে। তিস্তা নদীর বর্তমান দৈর্ঘ্য ১৭৭ কি.মি. ও প্রস্থ ৩০০ থেকে ৫৫০ মিটার। 

চ. পশুর নদী: খুলনার দক্ষিণে ভেরব বা রূপসা নদী। এটি আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ত্রিকোনা ও দুবলা দ্বীপদ্বয়ের ডানদিক দিয়ে মংলা বন্দরের দক্ষিণে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। প্রায় ১৪২ কি.মি, দীর্ঘ ও ৪৬০ মিটার থেকে ২.৫ কি. মি. প্রস্থ এই নদীর গভীরতা এত বেশি যে, সারা বছর সমুদ্রগামী জাহাজ এর মোহনা দিয়ে অনায়াসে মংলা বন্দরে প্রবেশ করতে পারে।

ছ. সাঙ্গু-ফেনী, নাফ, মাতামুহুরী: সাঙ্গু নদী উত্তর আরাকান পাহাড় থেকে নির্গত হয়ে বান্দরবন জেলার থানছি উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ফেনী নদী। সন্দ্বীপের উত্তরে ফেনী নদী বঙ্গপোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬ কি.মি. অন্যদিকে লামার মাইভার পর্বতে মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। নদীটি কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ার পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২০ কি.মি.


নবম ও দশম শ্রেণি_ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়_অধ্যায় তৃতীয়_ সৌরজগৎ

 


সৌরজগৎ ও ভূমণ্ডল

v  পৃথিবীর চারদিকে অসীম মহাকাশ বিস্তৃত। মহাকাশে রয়েছে নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহারিকা, ধূমকেতু, গ্রহ, উপগ্রহ, উল্কা ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক। মহাকাশের এই অসংখ্য জ্যোতিষ্ক নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজগৎ। সূর্য বিশ্বজগতের একটি নক্ষত্র।

v  সৌরজগতের সকল গ্রহ ও উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। গ্রহ ও উপগ্রহসমূহ সূর্য ও নিজেদের পারস্পারিক মহাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিক পরিক্রমণ করছে।

v  বিশ্বজগতের বিশালতার মধ্যে সৌরজগৎ নিতান্তই ছোট, পৃথিবী আরও ছোট।

সৌরজগৎ

v  সূর্য এবং এর গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু, উল্কা প্রভৃতি নিয়ে যে পরিবার তাকে বলা হয় সৌরজগৎ। সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র হলো সূর্য। সৌরজগতে ৮ টি গ্রহ, শতাধিক উপগ্রহ, হাজার হাজার গ্রহাণুপ্রঞ্জ ও লক্ষ লক্ষ ধূমকেতু রয়েছে।

সূর্য

Ø  সৌরজগতের সকল গ্রহ ও উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। সূর্য পৃথিবী অপেক্ষা ১৩ লক্ষ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে এটি প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

Ø  এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। সূর্যের উপরিভাগের উষ্ণতা ৫৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহগুলোর তাপ ও আলোর উৎসও সূর্য।

Ø  সূর্যের কোনো কঠিন বা তরল পদার্থ নেই। শতকারা ৫৫ ভাগ হাইড্রোজেন, ৪৪ ভাগ হিলিয়াম এবং ১ ভাগ অন্যান্য গ্যাসে সূর্য গঠিত।

Ø  আণবিক শক্তি সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সূর্যে অনবরত হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম এবং হিলিয়াম থেকে শক্তি তৈরি হচ্ছে। সূর্য প্রায় ২৫ দিনে নিজ অক্ষের ওপর একার আবর্তন করে। সূর্যের আলো  ও তাপ ছাড়া পৃথিবীতে উদ্ভিদ, প্রাণী কিছুই জন্মাতো না এবং প্রাণের স্পন্দন সম্ভব হতো না।

গ্রহ:

মহাকর্ষ বলের প্রভাবে কতোগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিক্রমণ করছে; এদের গ্রহ বলা হয়। গ্রহের নিজস্ব আলো ও তাপ নেই। সৌরজগতের গ্রহের সংখ্যা ৮ টি, এ গুলো হলো:--

বুধ (Mercury), শুক্র (Venus), পৃথিবী (Earth), মঙ্গল (Mars), বৃহস্পতি (Jupiter), শনি (Saturn), ইউরেনাস (Uranus) ও নেপচুন (Neptune)।

গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বৃহস্পতি এবং সবচেয়ে ছোট বুধ।

১। বুধ

Ø  বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ। এর ব্যাস ৪,৮৫০ কিলোমিটার এবং ওজন পৃথিবীর ৫০ ভাগের ৩ ভাগের সমান।সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে এর ৮৮ দিন সময় লাগে। বুধের কোন উপগ্রহ নেই।

২। শুক্র

Ø  সূর্য থেকে দুরত্বের দিক দিয়ে শুক্রের অবস্থান দ্বিতীয়। এটি পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ। সূর্য থেকে শুক্রের দুরত্ব ১০.৮ কোটি কিলোমিটার এবং পৃথিবী থেকে দুরত্ব মাত্র ৪.২ কোটি কিলোমিটার।

Ø  একে সন্ধ্যিায় পশ্চিম আকাশে আমরা সন্ধ্যাতারা রূপে এবং ভোরে পূর্ব আকাশে শুকতারা রূপে দেখতে পাই। সূর্যের একবার পরিক্রমণ করতে এর সময় লাগে ২২৫ দিন।

Ø  শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। শুক্রের বায়ুমন্ডেলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শতকারা ৯৬ ভাগ। শুক্রের আকাশে বছরে দুইবার সূর্য উদিত হয় এবং অস্ত যায়।

৩। পৃথিবী

Ø  পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। এর আয়তন ৫১,০১,০০,৪২২ বর্গ কিলোমিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দুরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৩.৯০সেলসিয়াস।

Ø  পৃথিবীতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন রয়েছে। ভূত্বকে প্রয়োজনীয় পানি রয়েছে। গ্রহগুলোর মধ্যে একমাত্র পৃথিবীই জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জীবন ধারণের জন্য আদর্শ গ্রহ।

Ø  চন্দ্র পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। এটি ২৯ দিন ১২ ঘন্টায় পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করে। চাঁদের পৃষ্ঠদেশে গর্ত, পাহাড় ও পর্বত লক্ষ করা গেছে।

৪। মঙ্গল

Ø  সূর্য থেকে দুরত্বের দিক দিয়ে পৃথিবীর পরেই মঙ্গলের স্থান। সূর্য থেকে গড় দুরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার এবং পৃথিবী থেকে ৭.৮ কোটি কিলোমিটার। মঙ্গলের ওজন পৃথিবীর ওজনের দশ ভাগের এক ভাগ।

Ø  সুর্যকে পরিক্রমণ করতে মঙ্গল গ্রহের লাগে ৬৮৭ দিন এবং নিজ অক্ষে একবার আবর্তন করতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টা ৩৭ মিনিট। মঙ্গলের ২টি উপগ্রহ আছে ডিমোস ও ফেবোস।

Ø  মঙ্গল গ্রহের উপরিভাগে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এ গ্রহের পাথরগুলোতে মরিচা পড়েছে। ফলে গ্রহটি লালচে বর্ণ ধারণ করেছে।

৫। বৃহস্পতি

Ø  সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি। সূর্য থেকে দূরত্বের ভিত্তিতে বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান পঞ্চম।

Ø  বৃহস্পতি সূর্য থেকে প্রায় ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বৃহস্পতি ১২ বছরে একবার সূর্যকে এবং ৯ ঘন্টা ৫৩ মিনিটে নিজ অক্ষে আবর্তন করে। গ্রহটিতে পৃথিবীর একদিনে ২ বার সুর্য ওঠে ও ২ বার অস্ত যায়।

Ø  এ গ্রহের ৬৭ টি উপগ্রহ আছে। এগুলোর মধ্যে লো, ইউরোপা, গ্যানিমেড ও ক্যাপলিস্টো প্রধান।

৬। শনি

Ø  শনি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্যথেকে শনির দুরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। শনি ২৯ বছর ৫ মাসে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে এবং ১০ ঘন্টা ৪০ মিনিটে নিজ অক্ষে একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর চেয়ে শনির ব্যাস প্রায় ৯ গুণ বড়।

Ø  তিনটি উজ্জ্বল বলয় শনিকে বেষ্টন করে আছে। শনির ৬২ টি উপগ্রহের মধ্যে ক্যাপিটাস, টেথিস, হুয়া, টাইটান প্রধান।

৭। ইউরেনাস

Ø  ইউরেনাস সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ। সূর্য থেকে এর দুরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার ৮৪ বছরে এটি সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর গড় ব্যাস প্রায় ৪৯০০০ কিলোমিটার।  এর আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৬৪ গুণ তবে ওজন পৃথিবীর মাত্র ১৫ গুণ।

Ø  গ্রহটির আবহমণ্ডলে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অধিক। এর ২৭ টি উপগ্রহ রয়েছে। মিরিন্ডা, এরিয়েল, ওব্রেন, আম্ব্রিয়েল, টাইটানিয়া প্রভৃতি ইউরেনাসের উপগ্রহ।

৮। নেপচুন

Ø  নেপচুনের গড় ব্যাস ৪৯,২৪৪ কিলোমিটার এবং সূর্য থেকে গড় দুরত্ব ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। সূর্য থেকে অধিক দুরত্বের কারণে গ্রহটি শীতল। গ্রহটি অনেকটা রীলাভ বর্ণের । নেপচুন ১৬৫ বছরে সূর্যকে একবার পরিক্রমণ করে। এর উপগ্রহ ১৪ টি। উল্লেখযোগ্য উপগ্রহ হচ্ছে ট্রাইটন ও নেরাইড।

Creating Account on Digital Literacy _Part 1


 Website Link: https://digitalliteracy.gov.bd/

অষ্টম শ্রেণি_বাংলা দ্বিতীয় পত্র_বানান

ভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে হলে সে ভাষার বানান জানা খুব জরুরি। প্রত্যেক ভাষারই নিয়ম আছে। বাংলা ভাষার বানানেরও বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। 

এই নিয়ম সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা আধুনিক করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণভাবে মান্য করা হয় বাংলা একাডেমি অনুমোদিত বানানরীতি। নিচে বাংলা বানানের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম দেখানো হলো।

বানানের কয়েকটি সাধারণ নিয়ম

ক. বানানে ই ঈ, উ ঊ- এর ব্যবহার

১। যেসব তৎসম শব্দের বানানে হ্রস্ব ও দীর্ঘ উভয় স্বর (ই ঈ, উ ঊ) অভিধানসিন্ধ, সে ক্ষেত্রে এবং অতসৎসম (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র) শব্দের বানানে হ্রস্বস্বর (ই , উ ) হবে। যেমন: 

তৎসম শব্দে: 

অঙ্গুরি, অটবি, আবির, আশিস্, শ্রেণি, সারণি, পদবি, বিদেশি, তরি, দেশি, তরণি, ভ্রু।

অতৎসম শব্দে:

আদিম, আপিল, আমিন, আলমারি, উকিল, উর্দু, কারবারি, কারিগরি, কুমির, ধুলো, জরুরি, যিশু, লটারি, শিকারি, হাজি ইত্যাদি।

২। কয়েকটি স্ত্রী বাচক শব্দের শেষে ঈ-কার হবে। যেমন:-

অভিনেত্রী, কর্ত্রী, কল্যাণী, কিশোরী, গাভী, গুণবতী, শ্রীমতী, সতী, সরস্বতী, যুবতী, মাতামহী, পিশাচী, পত্নী, নারী, দুঃখিনী ইত্যাদি

৩। ভাষা ও জাতির নামের শেষে ই-কার হবে। যেমন: আফগানি, ইংরেজি, ইরাকি, ইরানি, ইহুদি, কাশ্মিরি, জাপানি, পাকিস্তানি, ফরাসি, বাঙালি, হিন্দি ইত্যাদি।

৪। বিশেষণবাচক ‘আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হব্ যেমন: চৈতালি, পুবালি, বর্ণালি, মিতালি, মেয়েলি, রুপালি, সোনালি ইত্যাদি।

খ. বানানে ও-এর ব্যবহার

১। ক্রিয়াপদের বানানে পদান্তে ও-কার অপরিহার্য নয়। যেমন:

আনব, করত, খেলব, চলব, দেখত, ধরব, নাচব, পড়ব, বলত, মরব, লড়ব ইত্যাদি।

২। বর্তমান অনুজ্ঞার সামান্যরূপে পদান্তে ও-কার প্রদান করা যায়। যেমন: -

আনো, করো, খেলো, চলো, দেখো, ধরো, নাচো ইত্যাদি।

৩। ‘আনো’ প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও –কার হবে। যেমন: 

করানো, খাওয়ানো, ঠ্যাঙানো, দেখানো, নামানো, পাঠানো, শোয়ানো ইত্যাদি।

৪। অর্থ বা উচ্চারণ বিভ্রান্তির সুযোগ থাকলে কিছু বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয় শব্দে ও- কার দেওয়া আবশ্যক।

যেমন: কাল (সময়), কালো (কৃষ্ণ বর্ণ); কোন (কী, কে, কোনটি), কোনো (বহুর মধ্যে এক); ভাল (কপাল), ভালো (উত্তম)।

গ. বানানে বিসর্গঃ –এর ব্যবহার

১। পদান্তে বিসর্গঃ থকবে না। যেমন: ক্রমশ, দ্বিতীয়ত, প্রথমত, প্রধানত, বস্তুত, মূলত।

২। পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে। যেমন: অন্তঃস্থ, দুঃখ, দুঃসহ, নিঃশব্দ, পুনঃপুন, স্বতঃস্ফূর্ত। 

৩। অভিধানসিন্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন: দুস্থ, নিশ্বাস, নিস্পৃহ, বহিস্থ, মনস্থ।

ঘ. বানানে মূর্ধন্য-ণ ও দন্ত্য-ন-এর ব্যবহার

১। যুক্তব্যঞ্জনে (তৎসম শব্দে) ট-বর্গীয় বর্ণের (টঠডঢ) পূর্ববর্তী দন্ত্য-ন ধ্বনি মূর্ধন্য-ন হয়।যেমন: কণ্টক, ঘণ্টা, নির্ঘণ্ট, বণ্টন, অকুণ্ঠ, আকণ্ঠ, ভণ্ড, ভণ্ডামি, দণ্ড ইত্যাদি।

২। তৎসম শব্দে ঋ,ঋ-কার, র, র-ফলা, রেফ, ষ, ক্ষ – এর পর মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন/; ঋণ, তৃণ, অরণ্য, ত্রাণ, বর্ণ, বিদূষণ, বিশেষণ, ক্ষণ, ক্ষণিক।

৩। একই শব্দের মধ্যে ঋ,ঋ-কার, র, র-ফলা, রেফ, ষ, ক্ষ-এর যে কোনোটির পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ এবং য়, য়, হ,ং- এই বর্ণগুলোর একটি বা একাধিক বর্ণ থাকলেও পরবর্তী ন-ধ্বনি মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন:

কৃপণ, নিরূপণ, অগ্রহায়ন, অকর্মন্য, নির্বাণ, সর্বাঙ্গীণ, অপেক্ষমাণ, বক্ষমাণ।

৪। প্র, পরা, পরি, নির-এই চারটি উপসর্গের পর নম্, নশ্, নী, নু, অন্, হন্ প্রভৃতি ধাতুর দন্ত্য-ন স্থলে মূর্ধণ্য হয়। যেমন: 

প্র: প্রণাম, প্রণব, প্রণীত, প্রণিপাত,

পরা: পরায়ণ, পরাহ্ন

পরি: পরিণতি, পরিণাম, পরিণয়

নির: নির্ণীত, নির্ণয়, নির্ণায়ক।

৫। যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (অতৎসম শব্দে) ট-বর্গের পূর্বে দন্ত্য-ন হয়। যেমন: 

ইন্টারম উইন্টারম কারেন্ট, গ্র্যান্ড, টেন্ডার, প্যান্ট, ব্যান্ড, লন্ডন, সেন্ট্রাল।

৬। যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) ত-বর্গের পূর্বে দন্ত-ন হয়্। যেমন: অনন্ত, অন্তরঙ্গ, একান্ত, ক্লান্ত, জ্বলন্ত, গ্রন্থ, পরান্ন।

৭। সন্ধি ও সমাসযোগে গঠিত শব্দের বানানে দন্ত্য-ন বহাল থাকে। যেমন: অগ্রনায়ক, অহর্নিশ, ক্ষুন্নিবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, দুর্নাম ইত্যাদি।

৮। তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দে সর্বত্র দন্ত্য-ন হবে। যেমন: আপন, আয়রন, কুর্নিশ, গ্রিন, ঝরনা, মেরুন ইত্যাদি।

ঙ. বানানে মূর্ধন্য –ষ-এর ব্যবহার

১। ঋ কিংবা ঋ-কার- এর পরে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: ঋষি, কৃষি, কৃষ্ণ, দৃষ্টি ইত্যাদি।

২। র-ধ্বনি রেফ – এর রূপ নিয়ে কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের মাথায় বসলে ঐ ব্যঞ্জনের পর মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: আকর্ষণ, ঈর্ষা, উৎকর্ষ, বর্ষা, বিমর্ষ, হর্ষ ইত্যাদি।

৩। অ, আ ছাড়া অন্য কোনো স্বরবর্ণ এবং ক, র বর্ণের পরবর্তী দন্ত্য-স মূর্ধন্য ষ হয় । যেমন: ঈষৎ, উষা, এষণা, কোষ, জিগীষা, বিষম, রোষ, সুষমা ইত্যাদি।

৪। ই-কারান্ত ও উ-কারান্ত উপসর্গের পর কতকগুলো ধাতুতে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: সঙ্গ>অনুসঙ্গ, সেক>অভিষেক, স্থান>অধিষ্ঠান, সুপ্ত>সুষুপ্ত।

৫। যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম শব্দে) ট-বর্গের পূর্বে মূর্ধন্য-ষ হয়। যেমন: অনিষ্ট, অষ্টম, আড়ষ্ট, উচ্ছিষ্ট, উপদেষ্টা, কষ্ট ইত্যাদি।

৬। যুক্তব্যঞ্জন গঠনে (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) চ-বর্গের পূর্বে তালব্য-শ হয়। যেমন: আশ্চর্য, দুশ্চরিত্র, নিশ্চয়, পশ্চাৎ, প্রায়শ্চিত্ত, বৃশ্চিক, নিশ্ছিদ্র।

চ. বানানে রেফ – এর ব্যবহার।

রেফ- এর পর কোথাও (তৎসম, অতৎসম সকল শব্দে) ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: কর্জ, কর্ম,কার্য, পূর্ব, পর্দ, মর্মর, সূর্য ইত্যাদি।

ছ. বানানে ঙ/ং এর ব্যবহার

১। সন্ধিতে (তৎসম শব্দে) প্রথম পদের শেষে ম থাকলে ক-বর্গের পূর্বে ম স্থানে ং হবে। যেমন: অহংকার (অহম +কার); কিংকর, কিংবদন্তি, ভয়ংকর, সংকীর্ণ, সংগীত, সংঘ ইত্যাদি।

২। উপর্যুক্ত নিয়মে সন্ধিজাত না হলে, যুক্তব্যঞ্জনে ক-বর্গের পূর্বে ম্ স্থানে ঙ হব্ যেমন: আকাঙ্ক্ষা, অঙ্কুর, অঙ্গ, ইঙ্গিত, উচ্ছৃঙ্খল, পঙ্গু, শিক্ষাঙ্গন ইত্যাদি।

৩।প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে ং ব্যবহৃত হয়। যেমন: আড়ং, ইদানীং, এবং, ঠ্যাং, ঢং, পালং, ফড়িং ইত্যাদি।

৪। তবে অনুস্বারযুক্ত শব্দে প্রত্যয়, বিভক্তি বা স্বরবর্ণ যুক্ত হলে ং স্থলে ঙ লেখা হবে। যেমন: অড়ঙে, টঙে, ঢঙে, রাঙিয়ে।


প্রস্তুতকারী

বিজয় কুমার মন্ডল

সহকারী শিক্ষক

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ